ফারুখাবাদের বিদ্রোহী তাফাজ্জুল হুসেন খানের ছবি ছড়াল ভগৎ সিংহের বলে
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ছবিটি শহীদ ভগৎ সিংহের নয়, ফারুখাবাদের বিদ্রোহী নবাব তাফাজ্জুল হোসেন খানের।
ফারুখাবাদের (Farrukhabad) বিদ্রোহী (rebellion) নবাব তাফাজ্জুল হোসেন খানের (Nawab Tafazzul Hussain Khan) একটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ ভগৎ সিংহ (Bhagat Singh)।
বুম যাচাই করে দেখে ছবিটির সাথে করা দাবিটি ভুয়াে। সেপ্টেম্বর মাস শহীদ ভগৎ সিংহ-এর জন্মমাস হওয়ায় ছবিটি শেয়ার করে ওই ভুয়াে দাবিটি করা হচ্ছে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সাদা কালো ছবিটিতে দেখা যায়, পায়ে শিকল বাঁধা এক ব্যক্তি কারাগারের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "স্বাধীনতার অশ্রু গড়ানো গোধূলি বেলায় আমরা সাধারণেরা অন্ধ হয়ে হাসি কিন্তু এই মায়াবী সকল আবেগ গল্পে হয়তো আমরা কিছুদের ভুলে বসি। হ্যাঁ আমি তারই কথা বলছি.... ভারতমাতার বীর সন্তান জন্ম নিলেন দেশে শত্রু ব্রিটিশ কাঁপলো ভয়ে স্তম্ভিত হল শেষে। 'আপন দেশকে স্বাধীন করব'এই প্রতিজ্ঞা ছিল তার তাই তো এই অভিশপ্ত দেশে তিনি নিলেন অবতার। জীবন মরণ লড়াই মিটিয়ে শেষে কপালে ফাঁসির মঞ্চ জুটল গলায় দড়ির ফাঁস লেগে ভগৎ প্রাণ ত্যাগ করে বসল। আজ শহীদ ভগৎ সিংয়ের জন্মতিথি,আমাদের অশ্রুভরা চোখ তবে সে তো আর আসবেনা ফিরে,ব্যর্থ মোদের শোক। শুভ জন্মদিন বিপ্লবী শহীদ ভগৎ সিং।" (ক্যাপশনের বানান অপরিবর্তিত)
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: ভুয়ো দাবিতে ফের ছড়াল হলিউড অভিনেত্রী কেটি হোমসের ফোটোশ্যুটের ছবি
তথ্য যাচাই
বুম এই ছবিটিকে গুগল ও টিনিআই-এ রিভার্স সার্চ করে একাধিক ব্লগ পোস্ট ও আর্কাইভ-এর সূত্র পায় যেখানে ছবিটিকে ফারুখাবাদের বিদ্রোহী নাবাব তাফাজ্জুল হুসেইন খানের বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
আমরা দেখি ভিক্টোরিয়া স্টেট লাইব্রেরীর "দ্য লাট্রোব জার্নালে" ১৯৯৮ সালে ৬২ তম বসন্ত সংখ্যায় ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছিল। ওই ছবিটির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা ছিল, "ফেরুখাবাদের নবাব বিদ্রোহের সময় তাঁর অপরাধের কারণে ভারত থেকে আজীবন নির্বাসিত হয়েছিলেন, যার ফাঁসি হওয়ার কথা, তিনি এখন মক্কায় বসবাস করছেন।"
ছবির সূত্র হিসাবে বার্কলে ও লাট্রোব মহাফেজ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বুম সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে বিস্তারিত ভাবে ওই সংখ্যাটির বৈদ্যুতিন সংস্করণ খুঁজে দেখে।
"ইমেজস অফ এম্পায়ার: স্যার হেনরি বার্কলের ছবির অ্যালবাম ১৮৫৮ থেকে ১৮৭৭" প্রবন্ধে জার্নালটির ৪২ নম্বর পাতায় রয়েছে এই ছবি। এই ছবিটিকে ভগৎ সিংহের ছবি বলে চিহ্নিত করা হয়নি।
বুম রিভার্স সার্চ করে ফেসবুকে "হিস্ট্রি অফ ফারুখাবাদ" নামে একটি ফেসবুক পেজের হদিস পায়। সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজটি স্থানীয় ইতিহাসবিদ প্রয়াত ওয়াই পি কপূরের স্মৃতি রক্ষার্থে পরিচালনা করেন তাঁর পুত্র বিনয় কপূর। বুম বিনয় কপূরের সঙ্গে যোগযোগ করলে তিনি বুমকে জানান, "ছবিটি শেষ 'বঙ্গাস' শাসক তাফাজ্জুল হুসেন খানের। বেশ কয়েক বছর আগেও একই ভুয়ো দাবি অর্থাৎ ভগত সিংহের ছবি বলে ভাইরাল হয়েছিল।"
বিনয় কপূর আমাদের নবাব তাফাজ্জুল হোসেন খানের প্রৌপত্র নবাব কাসিম হুসেইন খানের যোগাযোগের নম্বর দেন। তিনি বুমকে নিশিত করেছেন ছবিটি ফারুখাবাদের নবাব তাফাজ্জুল হুসেন খানের। তিনি বলেন, "নবাব নিজশ্ব সেনাধানিয়ক ছিলেন পরাধীন ভারতের। পরে তিনি মক্কায় দেশান্তরিত হতে বাধ্য হন। সেখানেই মারা যান তিনি।"
প্রৌপত্র নবাব কাসিম হুসেইন খান বু বলেন ১৮৫৭ সালে ফারুখাবাদ থেকে সিপাহী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নবাব তোফাজ্জুল হুসেইন খান।
আরও পড়ুন: ক্যাথলিক যাজকের হিন্দুধর্ম গ্রহণ দাবিতে ছড়াল পোল্যান্ডের অভিনেতার ছবি